কমলা সোন্দরির অক্সিজেন কোশেন্ট



মোনালি রায়






ইদানীং শহর হইতে শহরে ঘুরন্ত চরকির মত ঘুরিতে ঘুরিতে রাস্তাঘাটে এক নব্য ট্রেন্ড লক্ষ্য করিতেছি।



অটো, বাস, ট্যাক্সি, অন্যান্য যাবতীয় সুসজ্জিত ও সজ্জাবিহীন কার এবং আরোহীগণ  মহাকাজে যাইবার উদ্দেশ্যে মহাব্যস্ত হইয়া মহাতাড়ায় রাস্তায় নির্গত হইতেছেন। ট্রাফিক সিগন্যাল বা অন্য কারণে অল্প বিলম্ব হইলেও একে অন্যের প্রতি অগ্নিদৃষ্টি ও সহনীয় ডেসিবেলের উর্দ্ধে  কথ্য/অকথ্য ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় অভিধান সিদ্ধ ও নিষিদ্ধ গালি গালাজ তারস্বরে বর্ষণ করিয়া নিজ নিজ রাস্তা মাপিয়া লইতেছেন। আমাদিগের মতন তৃণভোজী প্রাণীগণের কর্ণকুহরে তাহা কাংস্য বা বংশধ্বনি হইয়া গুঞ্জরিত হইতে থাকিতেছে সফেন সনীল সাগররেখা নির্দেশকারী তরঙ্গের মতন। কাজ অকাজের ফাঁকেফোকরে গালে হাত, কাপে চুমু দিইতে দিইতে ভাবিয়া কুলহারা কিনারাছাড়া হইয়া পড়ি, শহরগুলির হইল কী!



শহুরে ফুসফুস, কিডনি,  মস্তিষ্ক, হৃদয় ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যামোর গোড়া খুঁজিতে তদন্তে নামিয়া বুঝিলাম রোগের মূল কারণ হইল অক্সিজেন ডেফিসিয়েন্সি তথা কারবন মনো/ডাইয়ের সাফিসিয়েন্ট বাড়বাড়ন্ত। ফলতঃ রক্তকোষ ঝিমাইয়া পড়িতেছে, ইমিউন সিস্টেমে ভুতেরা নৃত্য করিয়া আরবান হেলথের হিসাব কিতাব তছনছ করিতেছে। ভূখন্ডের পর ভূখন্ড উন্নত অগ্নিতে, পুরিষে, লু'তে, পলিথিনে,মেটাল-সিলিকনে  এমন ভরিয়া উঠিতেছে যে তৃণভূকদের সাধ অবাধ্য জঙ্গলে পলায়ন করিতে চায়--



যেখানে ন্যাসেন্ট অক্সিজেন, ভিজিবল আলো, ট্রোপোস্ফিয়ার বাহিত বেদম বাতাস, ভার্জিন ভূমি, ডিসেন্ট-মেমোরিসম্পন্ন জলের বাঁধন দেহকে পুনরুজ্জীবিত করিবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পুরুষ্ট হইয়া উঠিবে, যন্ত্রপাতি সচল হইলে জীবনরূপ কর্মশালায় নতুন কর্মোদ্যম শুরু হইতে পারিবে। মনুষ্য শরীর আর যাহাই হউক ইঁট, পীচ, কংক্রিট, সুড়কির দ্বারা গড়িয়া উঠে নাই।



ফ্ল্যাটে, কোঠিতে প্রেগন্যান্ট মহিলামহল যে ভাবে ফয়েলড ভাইটামিন্স, স্টোরেজড মাল্টি সাপ্লিমেন্টস উদরস্থ করিয়া অথ মৃতের সন্তানদিগের জন্ম দিইতেছেন তাহাদের রোমগুলি 'ঐতরেয় উপনিষদ'কথিত জঙ্গল নহে সিন্থেটিক ইলাস্ট্রেটেড প্লাস্টিকের দ্যোতক।



আরবানাইজেশন যেমন যেমন সবুজকে গিলিয়া চিবাইয়া হজম করিতেছে, দুপেয়ে জংলীরা  যেমন যেমন শহুরে সভ্য হইয়া উঠিবার প্রয়াস করিতেছে, আমলা হরিতকীর বিকল্পে  ধোঁয়া পেট্রল হজম করিতে করিতে তেমনই দিশাহীন, অসহিষ্ণু, অমানবিক, সন্দেহপ্রবণ, কুচুটে হিংসুক কিংশুক হইয়া পড়িতেছে। হিংস্রতা ঢাকিতে তাহারা গোপন ছুরিকা পকেটে, ভ্যানিটিব্যাগেতে লইয়া মৎস্যবিমুখ অহিংস তপস্বী / তপস্বিনী সাজিয়া থাকে এবং যেকোন প্র বা অপ্ররোচনায় সেই সাজ খসিয়া পড়ে। কারণ অকারণের ছুরিকাঘাতে কত প্রাণ বেঘোর.....



অথচ সিমলিপাল, বরাইবুরু, আমঝরিয়া সপাট গিলিয়া শহর কলেবরে বাড়িতে জানে। সাথে রিডিয়ুজ, রিসাইকেল, রিইউজের এবিসি শিখিবার প্রচেষ্টা করে কিন্তু অক্সাইড টু অক্সিজেন রিওয়াইন্ডটুকু শিখিতে চাহে না!



এইরূপ ভয়াবহ ইমব্যালেন্স ব্যালেন্সে আনিবার জন্য হয়ত সবুজ সংক্রমণ সুদূর বা অদূর কোনও দিনে কংক্রিটকে এনক্রোচ করিতে চাহিবে। ইভ-আদম রিলেটেড অথবা মনুষ্যনির্মিত অন্যান্য সিস্টেমেটিক মানসিক/শারীরিক সম্পর্ক বিলুপ্ত হইতে পারে, মানুষ জাতির-ই অবলুপ্তি ঘটিতে পারে কিন্তু বৃষ্টি ও ঘাসবীজের জমাট বুনট ছিন্ন হইবে না। পতিত শহরের পরিত্যক্ত ঘোলা জলে, মেটাল-প্লাস্টিক স্ক্র‍্যাপের ঝাপসা রিফ্লেক্টরে  রৌদ্র ও মেঘ, সবুজ ও সেপিয়া হাত ধরিয়া, সোহাগভরিয়া হয়ত বা  কোনও নোয়া / নচিকেতার অপেক্ষা করিবে --