অযান্ত্রিক

মহুয়া বৈদ্য



১।


মহীখন্ডে গান জানো অতুল কী স্নেহভরা গান

হিমঘ্ন বরফ ফাটে গলে যায় সামুদ্রিক স্নান

বাতাস তুলির টানে চুপি চুপি রামধনু ছেনে

ছায়াদল বানিয়েছে, যদিও বৃক্ষ ঘোরে একা

তথাপি পাতার সাজ এতবেশি সঘন সবুজ

জলদ কম্পন এসে মেঘমন্ত্র বাজালো সমীপে

ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ? অনাময়! অযান্ত্রিক মীড়ে।




২।


অনেক অশাখ কথা বিধিমতো ইমনকল্যাণ

কোমল সকল শ্বাস একরতি বিষ, অনুপান

যদিও প্রখর বায়ু ঝড়ের মতোই মৃদু লীন

অধরা ব্যাপক স্মৃতি হাতড়াচ্ছে নিভন্ত সাকিন

এত অবকাশ পেয়ে একমুঠো মখমলি স্বেদ

কোমল ঋষভ স্বরে ভিজিয়েছে বিষাদীয় মেঘ

এবার  মাটির বুকে অনন্ত ঢেউ নেমে আসে

পিছল ধোঁয়ার ঘ্রাণ, আচমন, সঘন বাতাসে



৩রা সেপ্টেম্বরের কবিতা


সারাদিন টব আর মাটি নিয়ে বেলা কেটে গে্ল

অসময়ে চান আর দুপুরের ভাতও খেয়েছি

এইবার আনমনা গান শুনে আর গান শুনে

টবের মাটিতে দেব অনুপম সুরের সূচনা

কালকে টবের মুখে কিছু বীজ ছড়িয়েছি,জল

ঠিক চারদিন পর জাগবেই, আশায় রয়েছি

ভেবেছি ষড়জ এসে নতুন পাতার কানে কানে

দিয়ে যাবে ফিসফাসে নিখুঁত  স্বরের প্রণোদনা



সেইমতো কান পাতি, শুনি দরবারী লাগে দোল

অমল টবের পাশে একা একা জাজিম পেতেছি

 হাওয়া ও গাছটি যেন 'সরগম', আবেশে ও টানে

প্রাণের নিবিড় ডাকে সরল সুরের আলপনা

এমন অরূপ সাজ টবের গাছেতে পেয়ে গেছি

ব্যালকনি বিলাসিতা, শিশির বিন্দু যেন ধানে

এমন তো হয় বলো! সামান্যের মিঠে ধুলিকণা।



ভাঙা -গান


গহন জীবন-গান ছুঁতে চায় সমুদ্র-লহরী

এমন আলোর ভাষা তবু কেন দুখ জাগানিয়া

একক পথিক যদি পার হয় নদী, উজানিয়া

 সুরের সফল তারে জেনো ঠিক ঝলকে বিজুরী

 পথের ধুলোর তান বুনে দেয় রাগিনী, মল্লার

প্রতিটি বালুর কণা ত্রিমাত্রিক, নিখাদ হার্পূন

আবিমিশ্র লাবডুব। জলোচ্ছ্বাস। ভারবাহী তূণ

এইবার ঠিকঠাক লক্ষ্যভেদ, নিয়তি-বিস্ফার        


অথচ খরল স্রোত পাড় গড়ে, জল ভেঙে যায়

আনন্দ একলা তাই আনন্দকে জাগাতে পারে না

স্রোতস্বিনী যদিও বা ভেদ করে কুহক প্রহর

নিকষ লহরী কেন অন্য তীর সতত ভাসায়?

ভাঙানিয়া গান থেকে বিপুল প্রাণের প্রণোদনা

আলোকিত স্বরে শোনো জেগে ওঠে সুরেলা লহর।