বহুরূপী মা 



কল্যাণাশীষ মন্ডল






জনস্রোত এগিয়ে চলেছে

প্যান্ডেলের দিকে-

চলেছি আমিও,

মানুষের অসহনীয় আদর খেতে খেতে--

প্রায় যখন কাছাকাছি এসে পড়েছি,

দরকার ছিল একটুকু জায়গার;

ভাল করে দাঁড়াবার;

যখন থেকে ডি.এস.এল.আর  ভালবেসে তার মালা

গলায় পরিয়েছিল

তখন থেকে তার জন্য

একটা ভাল ছবি উপহার তো দেওয়াই লাগে; তাই

মা এর এত্ত বড়মুখ খানা

আমার তালু বন্দী করতে আঙ্গুলে দিলাম চাপ-

সাথে সাথে মনে হলো

কেউ যেন আমায় বন্দী করছে;

হাত ধরে হালকা টান-

বাবু, কিছু দেবে বাবু

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি

বছর সাত কি আটের একটি ছেলে;

আমার গলার ক্যামেরার মালা খুলে

‘মা’ থেকে ছেলের দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসু চোখে বল্লুম-

কি রে কি হয়েছে –

কিছু ভিক্ষা দেবে, একটু খাব

কি খাবি-

যা দেবে-

তোর কি খেতে ইচ্ছে বল –

চোখে মুখের ভাব এমন হলো যে

এমন জিজ্ঞাসা যেন কখন শোনেনি আগে

এক নিমেষে শুকিয়ে যাওয়া জীর্ণ শরীরটায়

আনন্দের এক স্রোত বয়ে গেল বলে মনে হল,

‘আমি চিকেন পিৎজা খাব’

সে কি রে, একেবারে চিকেন পিৎজা, অন্য কিছু না-

না, খুব ইচ্ছে করত খেতে, কিন্তু এত পয়সা কোই

‘তোর কি খেতে ইচ্ছে’ বলাতেই তো বললাম-

ও তাই, চল –

দোকানদার একে এক প্লেট চিকেন পিৎজা দাও-

না না আমি প্লেটে খাব না

একটা পলিথিনে ভরে দাও –

কে’নরে ... এই যে বল্লি খুব খিদে পেয়েছে

হ্যাঁ পেয়েছে তো

তবে মা কে দিয়ে খাব, মা ও তো এখন কিছু খায় নি কিনা –

হাত নাড়তে নাড়তে চলে যাচ্ছে সে-

তার মুখও আপন যন্ত্রে তালু বন্দী হল,

তবে রেখে গেল অনেক প্রশ্ন,

প্রাসাদোপম প্যান্ডেলে রাশি রাশি

প্রসাদের অধিকারী মা-

আর খোলা আকাশের নিচে

না খেতে পাওয়া মা;

‘কি খাব’ এই চিন্তায় ঘুরতে থাকা কেউ

আর কোথাও বা ‘কি দিয়ে খাব’ সেই চিন্তা;

আমরা সবাই কিন্তু দাঁড়িয়ে আছি

একটা মাত্র মা, মা-ধরিত্রীর উপর !!!