ধুনকির জন্য এলিজি 

শুভদীপ মৈত্র




অনেক দিন জলপাইয়ের টক রেঁধে ডাকোনি আমাকে

অনেকদিক গাওয়া ঘিয়ের লুচি ভাজতে ভাজতে 

স্টোভের পাশে বসে গল্প করোনি

অনেক দিন অ্যাক্রিলিক নিয়ে আমার পিঠ থেকে পাছা

নদী, পাহাড়, মরুভূমির ছবি আঁকোনি,

আন্দালুসিয়ার সুরগুলো বুড়িগঙ্গার গানে মেখে

দুলতে-দুলতে ভাসতে-ভাসতে শোনাওনি পাশে বসে


এগুলো সত্যি ঘটে না বলে যারা ভাবছে 

তাদের বলি, না ঘটলে আমি কেন বারবার দেখি

স্বপ্ন নয়, স্মৃতির ভিতরে

কোনো যতিচিহ্ন ছাড়াই বারবার 

ফিরে আসে স্বাদ, গন্ধ, শব্দ

জিভ, কান নাক সব পায় তাদের –  

যেভাবে দাও পদপল্লব লেখার সাহস না পেলেও 

স্বয়ং সে নিজে এসে বসে যায় কবিতায়।



ছুরির ফলার উপর দিয়ে হাঁটালে আমায়

চোখের তাগিদ ছিল তবুও অটুট

সেবার্গ যেভাবে অতর্কিতে ব্রেথলেস থেকে

তোমার চাহনিতে ফিরে আসে।

কোথায় পালাব আমরা?

ঢের বুড়ো হবে যাব তবু নতুন কোনো দ্বীপ নেই 

ট্রেক রুট খুঁজে পেল কেউ না-কি?

তোমার পাহাড় অভিলাস আমাকে জাগাল,

এ-বছর নিউ ইয়ার্স ইভে ভূড়ান্ত হুল্লোড়ে অথবা নেশায়

মাথা ফাঁকা হয়ে এলে মনে পড়ে

তোমার বিগত আলোকবর্ষের ছবি, 

সমুদ্র তটে ভিজে, সোঁদা নমকিন যুবতী। 

স্টকারের মতো পিছু নিই তোমার তুমিকে চেয়ে,

ঘামে ভিজে অটোর পিছনে বসে চলে গেলে 

আপিস ফেরত।

আমি থাকি ছিপা-রুস্তম

তোমার প্রেমিকদের খোঁজ শেষে

দোমড়ানো রুমালের শেষ সুবাস আমি

ফিরে আসি বারবার

যত দূর গেছ দেখেছ রয়েছি সেঁধিয়ে

তোমার মাথার কোনো আদিম গুহায়। 



এই যে তুমি অস্তিত্ব সংকট হয়ে জাগিয়ে রাখছ

এত নির্জীব ঘুম, হাঁই-তোলা রোজের মধ্যে, 

বহতা, আমার শরীরের উপর ও নিচে এত স্রোত

এত বিচিত্র আগুন জ্বালাচ্ছ ও নেবাচ্ছ

অপেক্ষার দিন ও রাত জুড়ে। 

শীতের ঝলমলে পোশাকের আড়ালে 

লুকিয়ে থাকে কত মনবেদনা

অথচ মাথা-ধরার মতো অচিকৎস্য 

কোনো কিছুই নয়, প্রেম ও কবিতা। 

ধারাল গলা-কাটা-ক্ষুরের বদলে যেমন

বহু বোলানো ব্লেড বোদা স্পর্শে কাটে,

কম্বল ভাল লাগে, অন্ধকার আরো গাঢ়,

তেমন খুচখুচে কিছু ব্যথার মধ্যে এসো

বহতা আমার। তোমার অস্তিত্বে বা সংকটে 

ডুবে ছানতে থাকব শ্বাসরুদ্ধ বেঁচে থাকা

আর তুমি ভাসবে ও ভাসাবে আদিম মৃত্যুতে।



ছুঁয়ে ছেনে তোমাকে দেখব ভেবেছি

শীপ্রার তীরে অভিসারিকা যেমন 

অথবা পর্দায় বন্ডগার্ল – দুর্লভ,

ততটা সুদূর তুমি হবে না-কি!


আসলে কী নামে ডাকবে ভেবে না পেয়ে

এমন গোয়েন্দা-সমাজে চুপ হয়ে গেলে,

আমি যে দিয়েছি ডাকনাম তার কথা

বলেছ বান্ধবীদের আড়ালে টোল-পড়া হাসিতে।

সেই টোলে ডুবে গিয়ে কে নেবে পাঠ আজ

আমি ছাড়া? এ-কথা জানতে – তবু মানতে নারাজ। 


গোঁসা করে আমিও চালাই কথার ছুরি

হারাকিরি নিজেরই প্রেমেতে, বিচ্ছিন্ন হই,

তারপর তুমি আমি স্নান করি ভিন্ন শরীরে।

তাও দেখো এতটা অগম নয় যৌথ চলাচল

ঠিক ফিরে আসে হাওয়ায় আমাদের কথাবার্তা

একে অপরকে ডেকে নেয় রভসে আলাপে,

ছিনিয়েছ ভেবে যদি দূরে রেখে দাও

অভিসারে অপ্রকাশ্যে এজাহার শোনাও। 



আজ সারা সকাল বৃষ্টি

মুগের খিচুড়িতে কী ফোড়ন দেবো?

ভীমসেন গাইছেন মিঞা কি মলহার,

ইলিশের ডিম বা ভদকা কোনোটাই নেই,

জানলার পাশে বেশিক্ষণ বোসো না 

অথবা ছাদে কাপড় মেলতে যাওয়ার দরকার নেই – 

এইটুকুর বেশি এখন কী বা জানাব, 

এমন অসময়ে ঝেঁপে এলে 

হারিয়ে যায় কথারা, ভিজে চুপচুপে হয়

যদিও একটু পরেই রোদ উঠে যাবে খবরে জানাল

হয়তো চায়ের জলে পাতা থিতনোর আগেই। 

জুঁই বা কামিনী ফুল নিয়ে ঘরে কেউ আসবে না,

তবু সেই ছন্দ ছড়িয়ে পড়েছে হাতের তালুতে

এই ঘন মেঘে রঙা ইনল্যান্ড লেটার আর নেই 

তবু মনে মনে তাতে চিঠি লিখো, 

লিখো মেঘে মেদুর হল অম্বর আজ....


(ধুনকি, কবির প্রেমিকার নাম, যার কিছুটা বাস্তব আর কিছুটা কল্পনা)