দীপঙ্কর দত্ত

মনীষা কর বাগচী




ফেসবুক আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। ফেসবুকে না এলে এত ভাল ভাল লেখা পড়া সম্ভব হত না। এত বড় বড় কবিদের সঙ্গে পরিচয় হত না। এত ভাল ভাল বন্ধু পেতাম না।


কিন্তু কখনো কখনো ফেসবুক কষ্টও দিয়েছে অনেক। পেয়ে হারানোর যন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়েছে।


কবি দীপঙ্কর দত্ত আমার একজন খুব ভাল বন্ধু ছিলেন। একদিন আমার কাছে তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। অত বড় একজন লেখক আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন দেখে আমার খুব আনন্দ হয়েছিল সেদিন। আমি তার বন্ধুত্ব স্বীকার করলাম। তার সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লাগত।


আমাকে লেখা তার প্রথম মেসেজ, 

"গোবরডাঙ্গা থেকে নিউ দিল্লি ? আরে বাহঃ ! এতো স্মৃতি জাগানিয়া ! আমি নই, আমার মা কখনো ছিলেন গোবরডাঙ্গায়, শৈশবে। তারপর কুলাঙ্গার এই সন্তানের কারণে দিল্লিতে এসে দয়ানন্দ ঘাটে আম কাঠের তলায়"।


আমাকে লেখা তার দ্বিতীয় মেসেজ, "দিল্লিতে কোথায় থাকেন? আমরা কয়েকজন কবি বন্ধু দিল্লি হাটে শনিবার শনিবার আড্ডায় বসি কবিতা নিয়ে। যদি দেখা হয় তো কৃতার্থ হই। "


আমার দুর্ভাগ্য দিল্লি হাটে আর আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তার সঙ্গে আর দেখাও হলনা কোনোদিন। আমার সঙ্গে অনেক বার ফোনে কথা হয়েছে। ফেসবুকে এসে এমন ভাল মানুষ আমার নজরে খুব কমই এসেছে। তিনি আমার এমনই একজন বন্ধু ছিলেন যাকে বিশ্বাস করা যায়, যার উপর ভরসা করা যায়।


কিছু দিন ধরে আমার মেসেজের কোনো উত্তর পাচ্ছিলাম না । আমিও অভিমান করে তাকে মেসেজ করা ছেড়ে দিলাম। কয়েক মাস ধরে কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে একটু চিন্তিত হলাম। দু তিন দিন আগে খোঁজ নেওয়ার জন্য তার প্রোফাইল খুলেছিলাম সেখানে দেখলাম তার লাস্ট পোস্ট 21-12-2016. তারিখে। আরো চিন্তায় পড়ে গেলাম । এতদিন ধরে একজন কবি কিছু পোস্ট না করে কি পারে??


তখন আমার আর তার মিউচুয়াল ফ্রেন্ডদের নক করলাম। অনেকেই বললেন তার ব্যাপারে কিছু জানেন না। শেষ পর্যন্ত লেখক অজিত রায়ের কাছে তার খবর পেলাম। জানতে পারলাম তিনি আমাদের ছেড়ে, তার কবিতার আড্ডা ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছেন যেখান থেকে আর কোনোদিনো ফিরে আসা যায় না। খবর শুনে চোখে জল এসে গেল। খুব কষ্ট পেলাম। তখন থেকে ভাবছি আর কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করব না, না জানি কে কখন ছেড়ে চলে যাবে...


আফসোস এমন একজন মানুষের উপর আমি অভিমান করেছিলাম 

যে নিজেই এই পৃথিবীর উপর অভিমান করে অনেক অনেক দূরে চলে গেছেন।


 হয়ত আমিও একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে হারিয়ে যাব কোনো এক অজানা ঠিকানায়।


জানি কবির মৃত্যু হয় না। তবু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তার আত্মার চির শান্তি হোক। তিনি যেখানে আছেন সেখানে যেন ভাল থাকেন এই কামনা।