বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য
বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য
লেখক / সংকলক : Web Admin
মৃত্যুঞ্জয়ী
বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য
মৃত্যু ই মৃত্যুঞ্জয়ী । নতুন জীবনের জনক ।
গ্রীষ্মে গলে যায় হিমবাহ ।
শীর্ণ কায়া ঝর্ণা গুলি হয়ে ওঠে উচ্ছল । আনন্দিত ।
ছোট ছোট শুকনো পাতা গুলো পড়ছে টুপটাপ ।
হাওয়া তে দুলতে দুলতে যেন ব্যালেরিণা ।
মরে গিয়ে এরা বাড়াবে জমির জীবন শক্তি ।
গজাবে নতুন উদ্ভিদ । সবুজ ঘাস ।
দৃষ্টি শোভন ।
পূর্ণিমার চাঁদ ।কোমল ।শুভ্র ।সুগোল ।
কাল থেকে শুরু হবে ক্ষয় ।শেষ হবে অমাবস্যার রাতে ।
স্ত্রী ওঠেন প্রত্যূষে । সকাল সাতটা ।
মা কালীর সামনে জ্বলছে দীপশিখা ।
যখন যাব আমি স্নান সেরে
প্রদীপ যাবে নিভে ।
আবার জ্বলবে সন্ধ্যা আরতি র সময় ।
এই হলো জীবনের পাঁচালী ।
মৃত্যুর ও ।
ঘণ্টা বাজে
ঘুম ভাঙল দেরিতে ।
ঘড়িতে সাতটা পঞ্চান্ন ।
হতেই পারে । শুয়েছি তিন টের পর ।
ঘুমের ওষুধ খেয়ে ।ডবল ডোজ ।
ডাক্তার বারণ করে ।শুনিনা ।
ঘুমটা ভেঙ্গে ও ভাঙ্গেনি l
এক ভঙ্গুর অস্তিত্ব ।
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ
স্থান কাল পাত্র শব্দ মাত্র ।
হঠাৎই মনে হলো রাখাল দা ঘণ্টা বাজাচ্ছে । আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । যেমন বাজাতেন ষাট বছর আগে ।
ঢং ঢং ঢং । ঠিক তিন বার ।
জানান দেওয়া । ক্লাসে যাও ।
ঘড়িতে নটা পঞ্চান্ন ।
পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর আবার বাজবে ঘণ্টা ।
এবার শুধু একবার । ক্লাস শেষ ।
ঘণ্টা বাজবে পাঁচ বার । চার টাতে । ছুটি । সেদিনের মতো ।
রাখাল দা ছিল ব্রাহ্মণ ।
আমাদের বাড়ির সামনে শিব মন্দির ।
সন্ধ্যা আরতি করতেন তিনি ।
যদি থাকতাম কাছাকাছি
দিতেন প্রসাদ ।দুটো বাতাসা ।
তুলসীপাতা ও থাকতো সাথে ।
আমার কলেজ টা ছিল মিশনারি ।
বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ।একপাশে ছিল
ছোট একটি গির্জা ।ছবির মতো ।
রবিবার সকালে বাজত ঘণ্টা ।
ব্রাহ্মণ সন্তান আমি । তবু ও যেতাম ।
বাইবেল পড়তে শুরু করেছি ।
ভালোই লাগতো । অবশ্য স্বীকার্য অন্য এক
কারণ ও ছিল ।
এখন ও ঘণ্টা বাজে কখনো কখনো ।
বুকের গভীরে ।চিন্তার ঘোলাটে হাওয়ায় ।
শুনতে পাই নিশুতি রাতে যখন রাজপথে
শুধু পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স ।
গ্রীষ্মে ভর দুপুরে যখন ভূতেরা ফেলে
দীর্ঘশ্বাস ।
চেষ্টা করি বুঝতে কি বলছে ঘণ্টা ।
সব ঘণ্টা ই কিছু বলতে চায় ।ডাকে ।
ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা সবসময় ।
আর সেই অপারগতা বাজায় তার নিজের ঘণ্টা
আমার অন্দরমহলে ।
হয়তো বোঝাতে চায় আমার অনাগত ভবিষ্যৎ ।
দম্পতি
বৃদ্ধ স্বামী স্ত্রী বসে আছে ।
পাশাপাশি ।নিশ্চুপ।
যেন সব কথা বলা হয়ে গেছে কোন এক বসন্তের রাতে । কত দশক আগে ।
তবুও কি
আশ্চর্য মুখর শব্দ ময় এই নৈশব্দ ।
স্মৃতি র আকাশে শ্রাবণের স্নিগ্ধতা ।
পূর্ণিমা । চাঁদের হাসি ।
প্রথম সন্তান। মুখে দলাই লামার প্রশান্তি ।
আমাদের জীবনে কত ফুল ।
দমকা হাওয়ার মতো এলো ব্যথা ।
স্বামী র বুকের গভীরে । শুরু হল দুঃস্বপ্ন ।
অস্ত্রোপচার । বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবন ।
বিষাদ এখন পাশে এসে বসে । স্ত্রী র ।
সর্বক্ষণ । বাগানে ঝরে গেছে ফুল ।
দিন আসে দিন যায় । সময়ের চাকা ঘোরে ।
বুদ্ধ মন্দিরে ধর্ম চক্রের মতো ।
আকাশ আবার ভরল আলোয় ।
গান এলো মনে ।বিগত হল বিষাদ ।
নিশ্চুপ দম্পতি । সামনে চলছে টিভি ।
দেখছেনা কেউ ।
কখন যেন একজন রাখলো হাত
নিজের ই অজান্তে ।
শুধু জানাতে ।
আছি আমি
তোমার সাথে ।
Review Comments
সোসাল মিডিয়া কামেন্টস