কুকুরের জাত




কালীপদ চক্রবর্ত্তী







সমর বাবু শেখসরাই-এ থাকেন। প্রতিদিন সকালে ছেলে রাজাকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে যান। প্রতিদিন রাজার অদ্ভূত অদ্ভূত প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হয়। রাস্তায় যাবার পথে রোজই ভোর বেলা চোখে পরে বাঙালি এবং অবাঙালি বহু পুরুষ ও মহিলারা তাদের কুকুরকে নিয়ে বেড়াতে বের হন। কুকুরের সাথে কথা বলেন। পাড়ার ভট্টাচার্য্ মশাই-ও তার কুকুরদের নিয়ে বেড়াতে আসেন এবং কুকুরদের সাথে বাংলায় কথা বলেন।











একদিন রাজা সমর বাবুর কাছে জানতে চায় - আচ্ছা বাবা, কুকুরদেরও কি বাঙালি, পাঞ্জাবি এইরকম ভিন্ন ভিন্ন জাত হয়?











সমীর বাবু প্রথমটা অবাক হলেও ছেলের সন্দেহের কারণ জানার জন্য জিজ্ঞাসা করেন – তোমার এরকম মনে হল কেন? 











রাজা -  বাবা, ঐ পাঞ্জাবি ভদ্রলোক তার কুকুরের সাথে পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলছেন এবং কুকুরটা তার কথা বুঝতে পারছে। আবার ভট্টাচার্য্ কাকু বাংলায় কুকুরগুলোর সাথে কথা বলছেন ও তার কুকুরগুলো বাংলা বুঝতে পারছে এমন ভাব দেখাচ্ছে। তাহলে কি বাঙালি কুকুর, পাঞ্জাবি কুকুর ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের কুকুর হয়? না হলে আলাদা আলাদা ভাষা বোঝে কেমন করে?

















গোঁড়ায় গলদ






সায়ক ছোটবেলায় আদর্শলিপিতে পড়েছিল -  “সদা সত্য কথা বলিবে, কদাচ মিথ্যা বলিবে না” ইত্যাদি ইত্যাদি। বাবা, কাকাদেরও দেখতো সেই পথ অনুসরণ করে ন্যায়ের পথে চলতে। তার এক মাস্টারমশাই ছিলেন নাম – অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়।  ওনার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মিথ্যা কথা বলবে না বলে স্থির করে নিয়েছিল। কিছুদিন সত্যি-কথা বলার পর দেখল,  নিজের মনোবল অসম্ভব বেড়ে যায়। তাই সত্যকে আঁকড়ে ধরেছিল।











চাকরী পেয়ে দিল্লী চলে আসে। চাকরীতে জয়েন করে প্রথম দিনই কারো ফোন এল, তিনি সায়কের Boss এর সাথে কথা বলতে চান। ফোন হোল্ড করে বসকে গিয়ে জানাতেই বললেন –





-          বলে দিন আমি অফিসে নেই।





সায়কের তখন আকাশ থেকে পরার মত অবস্থা। এ কুল রাখি, না ও কুল রাখি। একদিকে মিথ্যা বললে এতদিনের সত্যি বলার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়। অন্যদিকে মিথ্যা না বললে ভাল চাকরীটা হাত ছাড়া হতে পারে। এই রকম এক মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। সে দিন চাকরীটা সে ছাড়তে পারিনি। কারণ বেকারত্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা তার জানা ছিল। বেশ কিছুদিন মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছিল। কথায় কথায় তার সমস্যাটা অমলদা( পারিবারিক বন্ধু) কে জানাল। অমলদা সব কিছু শুনে বললেন –











অমল দা      -   তোমার শিক্ষার গোঁড়ায় গলদ আছে। তুমি আদর্শলিপিটা ভালভাবে পড়নি। অর্থাৎ সঠিক অর্থ বুঝতে পারনি।





সায়ক    -   মানে?





অমল দা      -   ওতে লেখা ছিল “সদা সত্য-কথা বলিবে। কদাচ মিথ্যা বলিবে না” তাইতো? অর্থাৎ ওই উপদেশটা অন্যের জন্য। নিজের জন্য নয়। তুমি সত্য কথা বলিবে। কিন্তু আমি সত্য কথা বলিব কোথাও   লেখা ছিল না।





এতবছর পর  সায়কের ব্যাপারটা পরিষ্কার হল।