নিজেদেরই দেশ
বিদ্যুৎ পাল
এখনো আছে সে রোদ, সে দিগন্তে ছড়িয়ে এই দেশ, ভারত,
যার তাপে ও হদিশে ওরা হাঁটছিল – কাজবন্ধ, বাসস্থান নেই,
ট্রেন নেই, বাস নেই, খাদ্য নেই, জল নেই, এমনকি পুলিশেরা
মারছে তাই খাদে, দিকহীন, জঙ্গলের নিঃশব্দ আড়ালে হাঁটছে …
কখনো ভাবে নি এতদূর থেকে গ্রাম অব্দি দুঃস্বপ্ন-সফরে
পথে পাবে হাজার মাইল, নিজেদেরই দেশ, সূর্যকরোজ্জ্বল!
কখনো দেখেনি, চিনতেও ভুল হচ্ছিল অনবরত! – এত স্পষ্ট,
দূরের ওই হিমশিখরগুলো? যেন পাহাড়ি ঢোল, সোহরে!
ওদেরই গ্রামের দিকে যেতে পড়ে? কখনো দেখেনি কেন আগে,
ট্রেনের জানলা থেকে? আর এত পাখি, রেললাইনে ময়ুর! …
তাই তো ঘুমিয়ে পড়েছিল লাইনে ক্লান্তিতে আর কাটা পড়েছিল;
সে রাতও ছিল এদেশেরই মহাজাগতিক কুয়াশা আর তারার!
আপাততঃ আবার রোজগারে কাজতালাশে দৌড়োচ্ছে মানুষ।
এখনো আছে সে রোদ, সে দিগন্তে, সে রাতে উন্মুক্ত এই দেশ, এই উপমহাদ্বীপ,
যার তাপে, হদিশে ও মহাজাগতিকে ওরা হাঁটে মাঝেমধ্যে আনমনা,
কাজের গাফিলতি বাঁচিয়ে, স্বজনের হাত ধরে, ভরসা জাগিয়ে।
বন্ধুবৎসল
এখনো আনন্দ থাকে বন্দ দোকানের সামনে সিঁড়িতে বন্ধুবৎসল।
রাত দশটা বাজবে, রবিনদা, দেবদত্ত, আমি কোতোয়ালি থেকে
এসে বসব, কথার তীব্রতায় ঘুরে তাকাবে মোড়ে দাঁড়ান ভীড়চোখ
ভাববে ঝগড়া কিনা, আসলে আনন্দের অগ্ন্যুদ্গীরণ বহুদিন পর
এবং কষ্টেরও, সেও তো আনন্দ – যুগ যায় – প্রিয়জনকে বলতে পারার …
সারাদিন রক্তাক্ত হই অর্ধসমাপ্তির কাঁচে গড়িয়ে গড়িয়ে যদিচ
অন্যায়ের পৃথিবীতেও মানুষের বন্ধুত্ব এত সাবলীল প্রতিকারময়
সারাদিন সেই বন্ধুত্বের রৌদ্রময় হাসি দেখি দেশে দেশে, বিলি করি
পতাকাসুদ্ধু জনে জনে – বৈদ্যুতিনে গড়া আভাসি নৈকট্যে সম্পর্কের,
এবং এভাবে, এক আবহ তুলি, দেখ এই দুনিয়ার রণ, রক্ত সত্য
সত্য সফলতাও, নাহোক শেষ, তবে আপাততঃ তার পর নেই;
বন্দ দোকানের সামনে তিনধাপ সিঁড়িতে ধুলো জমতে দেব না।
২
নিজের নিঃশ্বাসটা যদি নিজেই নিই, কী চা’ব রাতের আকাশে দোস্ত!
দেখনা, আমার নিঃশ্বাসটা নাও, সবকটা নক্ষত্রপুঞ্জের নাম বলে যাব।
আমি আর এই সভ্যতা যাতে মানুষ হতে চাইলে খুন হয় মানুষ
একই ছন্দে আছি – ভিতরে বাড়তে থাকা মৃত্যুর চিহ্ন টের পাই
শুধু তার এলেম আছে মুখে ফ্রেশেনার মেরে পূতিগন্ধ লুকোনোর।
দুহাজার একুশে এসে পৌঁছোব জানতাম না আমরা দুজনেই,
জানলেও লাভ হত না কিছু – যখন সে রয়ে গেল, আমাকেও
থাকতে হবে, নিজের নিঃশ্বাসটা অন্য কাউকে দেওয়ার মানুষ খুঁজছি ...