নভেরা হোসেন
লেখক / সংকলক : নভেরা হোসেন
এ হেন প্রত্যুষে
নভেরা হোসেন
ফিঙে এক ঝুলছে বৈদ্যুতিক তারে
সবকিছু পরিপাটি, টেবিলে সাজানো ওমলেট টোস্ট
জেলি মাখা বসনিয়ান ব্রেড
সংবাদপত্র দরজার ফাঁকে
দূর থেকে ভেসে আসছে মাইকের ধ্বনি
এ হেন প্রত্যুষে সব কিছু যখন প্রস্তুত
তোমার ভেতরে এক নিস্পৃহতা গ্রাস করলো
মচমচে পরোটাকে কাগজের মতো মনে হয়
মুখে দিতে বিস্বাদ
জিহ্বায় আর কোনো স্বাদ নাই
প্রেম এখনও টগবগ করে ফুটছে লিকারে
মুখে দিতেই লবনাক্ত স্বাদ
আলো কি আজ অনেকটা দূরে ?
কোথা থেকে শুরু আর কোথায় শেষ
ভেবে কিছু পাও নাতো অবেলায়
কবরস্থানের শান্ত শীতলতা মগজের নিউরনে নিউরনে
ছেনি কচি দিয়ে কেউ কেটে নিয়েছে তোমাকেই
আজ মাঘের শেষে দরজায় এসে কড়া নাড়ে কে ?
এই পারে তুমি জমে গেছো হিমে
চুমুকে চুমুকে নিজেকেই খেয়ে নিচ্ছ সারাবেলা
জীবন কড়া নাড়ছে দরজার ঐপারে
আয়নায় দেখা চোখ
আয়নায় দেখা চোখ
বলে যায় বিগত দিনের কথা
গোলাপি ফ্রকে দৌড়ে যাওয়া সরু রাস্তা ধরে
তখন সাপের মতো ছিপছিপে পথকে
বিরাট দুনিয়া মনে হতো
দুহাতে কাশফুল জড়িয়ে
অনন্ত আকাশে ভেসে চলা
আড়িয়াল খাঁর পশ্চিম তীরে
ধু ধু একটা পথ
তুমি একটা ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো
আটকে ছিলে নক্ষত্র হয়ে
আয়নায় সেই চোখ দুর্বিনীত চেয়ে থাকে
খুঁজেফেরে হারানো দোকান এল দরাদো
পৌষের রাতে কুয়াশায় ঢাকা সকাল
আস্ত একটা দুনিয়াকে খুলে দেয় চোখের সামনে
বায়োস্কোপে দেখা যায়
আবাবিল পাখি, কারবালার রক্তাক্ত ময়দান
হায় হাসান ! হায় হোসেন !
রব তুলে বুকে ছুরি নিয়ে মহররমের দল
এই চোখ খুঁজে নেয় লক্ষ্মীর পেঁচা
দুর্গার ধারালো অস্ত্র
কেটে চলে শত শত কচি ঘাস
রোবটের দুনিয়া
তুমি চেয়ে দেখো আয়নায় সেই চোখ
আজ আর চেনা যায় না
ফোলা ফোলা, ভেজা চোখ
শুন্যদৃষ্টি
যেন শাপগ্রস্ত মনসা
এই চোখ তুমি আর চেনো না
টুপটাপ ঝরে পরে শীতের রোদে
আয়নার পারদ গলে ঢাকা পরে গেছে বিস্তৃত জীবন
কিরিচের মতো তবু সেই চোখ ঝলসে ওঠে অমাবশ্যার রাতে
রাত ভরে বৃষ্টি
রাত ভরে বৃষ্টি
বুদ্ধদেব কবে মরে ভূত হয়ে গেছে
তোমরা এখনো বৃষ্টিতে ভিজে নস্টালজিক হও
যাবার বেলা পিছনে ফিরে তাকাও
যেতে যেতে পথ হলে সারা
হাতে তুলে নাও
অমল -ধবল একজোড়া চাতক- চাতকী
প্রেমিকের শোকে যে আজ দিশেহারা
ভুল ভেবে ঘুরে বেড়ায়
অতলান্তিক রাত
হৃদয়ের অলিন্দে অলিন্দে
বৃষ্টির তানপুরা
রাত ভরে বৃষ্টি তোমায় জাগিয়ে রাখে
অপরিচয়ের অপেক্ষায়
অলাতচক্র
ট্রেনলাইন একটানা বয়ে চলেছে
পিছনে শত -সহস্র সময়ের ভার
গোলাপি শাড়িতে ম্রিয়মান নারী
কুঁচকানো চামড়ায় সময়ের ছাপ
প্রতিটি মানুষ যেন জীবন্ত ফোয়ারা
ছলকে ওঠে চলকে ওঠে
আবার চুপসে যায়
শুকিয়ে কাঠ
চক্রাকারে সূর্যোদয় -সূর্যাস্ত
দুধের বালতি নিয়ে এক প্যাঁচে শাড়িতে নারী
দূরে শিশু মাটিতে গড়ায়
কাঁঠালের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক
তীর গতিতে ছুটে চলেছে তূর্ণানিশিথা
সবাইকে পেছনে ফেলে
সেলুলয়েডে দেখা চোখ
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে
অফুরান জীবন ট্রেনের জানালায়
এইখানে ট্রেন এসে থামলো
এখান থেকেই যাত্রা শুরু