তুষ্টি ভট্টাচার্য
লেখক / সংকলক : iPatrika Crawler
পাভলভ
তুষ্টি ভট্টাচার্য
১)
ভুল বানান থেকে জন্ম নিল সে
অবিকল প্রুফ রিডারের মত দেখতে
বানান আর বানানের মাষ্টার
কে কার টুকলি করেছে
পাগলামো কার বেশি-
এ কারখানায় কে থাকে!
জমে যাওয়া জীবনের ক্ষীর খায় পাভলভ।
২)
ছুটি হয়ে গেছে তার
বাড়ি থেকে নিতে আসেনি কেউ।
পাভলভ ভর্তি পাগল
আমার ভেতরে ঢুকে গেলে
ছুটি হয়ে যায় আমার।
পাভলভ ছুটিতে গেছে
মেলা থেকে কেনা বুলবুলি আর জিলিপি
সোনা রঙের ঝুমঝুমি বাজায়
পাভলভ ভর্তি পাগল আমাকে নাচায়
আমার ছুটি হয়ে যায়।
৩)
ছুটি হওয়ার পরে পাভলভের জন্ম হয়
এক জন্ম থেকে আর এক জন্মে যেতে যেতে
‘পাভলভ’ ‘পাভলভ’ নাম ধরে ডেকে উঠলে
ও আর সাড়া দেয় না।
পাভলভের মৃত্যু হয় না
৪)
জন্মান্তর মনে পড়ে
জাতক জীবন থেকে ফেরে না।
কান্ডের কাছে হাত পাতলে টুপ করে খসে পড়ে কর্ম
কান্ডারী গো, তুমি পাভলভ চিনলে না এ জন্মে!
হেঁইয়ো হেঁই – চোরাগোপ্তা টানে বিগত পাগল।
৫)
উদোম শরীর নিয়ে মার খায় এখনও
ঘায়ে ভ্যানভ্যানে মাছি, গান শোনে
পাভলভের খাঁজ কাটা থালায় ভাত, ডাল, রুটি
দুধের গ্লাস উল্টে যাওয়া বেড়ালের জিভ
ন্যাংটো পাগল লজ্জা পায়
পাগল তবু পাভলভ ছাড়ে না
৬)
মানবধিকার দিয়ে গেছে পোশাক
মাছ, ডিম, মাংসর বাটি
পায়ের ঘায়ে গোল গোল পটি
তবুও পাগল ভাল হয় না
এক্সপায়ারি ডেটের আগে সেডেটিভ দিলে
আচ্ছন্ন হওয়াই যায়, পাগল জেনেছে
বাতিল ওষুধের স্ট্রিপ টিজ দেখে
পাভলভ পাগল ছাড়ে না।
৭)
ছুটির দিকে যেতে নেই
বাড়ির ঠিকানা ভোলা সোজা
লাইফ হেল করে দিল লাইফ টাইম মেম্বারশিপ
পাভলভ হাসে পাগলের ভেতরে ঢুকে
পাগলের চোখে শুকনো পিঁচুটি
জল ছুঁতে বেদম ভয়
স্নানের উৎসব পাভলভ মাসান্তে রেখেছে।
৮)
পাগলের স্রাব, পাগলের ঋতু
পাগলের বন্ধ কারখানায়
যেখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে থুতুর পিচ
রঙ ও রংকানা পাগল দেখেছে অনেক
স্মৃতি বিভ্রাটের দায় পাভলভ এড়িয়ে চলেছে।
৯)
মেহুল পাখিটার নাম ছিল পাগল
কদম বাঁশিটার নাম ছিল পাগল
ছিনাথ বহুরূপীর নামও ছিল পাগল
সেয়ানারা জাত ভাই
গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে
পাগল ও পাভলভ ভাই ভাই
খামচে দিয়েছে
১০)
ওরা কেউ পাগল চেনেনি
পাগল পুষেছে ভেতরে
ভাঙা আয়না থেকে মুখ সরিয়ে নিলে
চিনতে পেরেছে
হিংস্র পাগলটা ঘুমিয়ে পড়েছিল
শান্ত পাগলটা জেগে উঠছিল
পাভলভের চোখ এড়ানো যায়নি
১১)
আমি পাভলভে যাই না
ছোঁয়াচে রোগ আমাকেও ছুঁয়ে দেখে না
পাভলভে যাওয়া মানা
নিষেধের গন্ডী টপকে পাগল বারবার
পাভলভে যায়
মস্ত পাঁচিল আর পাগলা ঘন্টা নেড়ে দিয়ে আসে।
১২)
আগুনে পুড়েছে পাগল কতবার
হাত জ্বলে গেছে, মুখ, চুল আর চামড়া গোটানো
পাগলের জ্বালা নেই, যন্ত্রণার মুখে ফুঁ দিয়ে হাসে
আগুন আর জল দূরত্বে থেকেছে
পাভলভে আগুন লেগেছে
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পাগল
১৩)
মন খারাপ থেকে বেরিয়ে এল পাগল
ডিপ্রেশন হাট বসিয়েছে পাভলভে
ঘোর, ঘোর, মতিচ্ছন্ন ঘোর সে এক
উল্টোমুখে খাবার গিলিয়েই ছাড়ে
‘রাধে রাধে’ বলে চলেছে কে যেন
এখনো রাই জাগে!
কানু হারামীর পেট খারাপ সারা মাস
বাতাসে বসন্তর রেণু বড় লাগে!
১৪)
এই তো গরমের মরসুম এসেই পড়েছে
পাগলের ঘামে নুন তাজা
আয়োডাইজড সল্ট বরাদ্দ করেছে পাভলভ
নীল-বেগুনী শর্টকাট ধরে
চোরাগোপ্তা হানা দেয় পরাবাস্তব
১৫)
‘সরে দাঁড়ান মেসোমশাই, মামা তুমিও সর’
পাগলের কথা শুনে হেসে ওঠে পাভলভ
কৃষ্ণ কোথা, কোথা সে সারথী,
এই কুরুক্ষেত্রের রথ নেই
ভাঙা চাকার আড়ালে কর্ণর ছায়া
পাভলভ হামেশাই দেখেছে।
১৬)
আর ধুতি, আর মুকুট, আর সেই ছায়া
পাগলের গায়ে পিঠে উঠে পড়ে
শক্ত আর ত্যাওড়া ঘাড় বেয়ে
ঘিলুর ভেতরে বুড়বুড়ি কাটে
যুদ্ধর মত একটা মস্ত যুদ্ধ
পাভলভেই ঘটে।
১৭)
ভোট দেব, ভোট দেব
দেব, দেব, দেবই...
টি এন শেসনকে নিয়ে আয়
রক্তের কালি দেগে দেবে আঙুলে
শুকিয়ে গেলে কালচে সর দাঁত দিয়ে খুঁটে খাব
আমরা হাঁটব পাভলভে ১০৩৪ কিমি
ন্যাকড়া বাঁধা পায়ের ছবি তুলতে এলে
তোদের মুখে কষাব দু লাথি
১৮)
আধার দিবি না?
আমাদের ছুপ্রিম আছে পাভলভ
ছু ছু ছুঁতে পারে না...
আদালত রায় দিয়েছে আজ
পাগল ছুনা গুনাহ হ্যায়।
আঁধারে পাগলদের চোখ জ্বলে
জানো না?
ছুঁচ নিয়ে আসছে ওই যে ডাক্তার...
চোখ বন্ধ কর সব্বাই
১৯)
ইয়ুথানাশিয়া আমাদের হোক
রেজারেকশন আমাদেরই ঘটে
পাগলের মৃত্যু অসম্ভব
পাভলভ বেঁচে আছে
‘হাসনা মানা হ্যায়’ ইতিহাস একথাই বলেছে।
২০)
জবর খবর, জবরদস্ত নিউজ আছে
পাগলের ঝুলিতে
কিছু আধলা ইট, ছেঁড়া ন্যাকড়া
আর অচল সিক্কা
এই নিয়ে মাসাহ আল্লাহ!
লা জবাব পয়গম্বরের সাথে পাঞ্জা লড়েছে
২১)
আর সেই শিবুর মাকে চেন?
‘শিবু চোর’ বললেই খিস্তির দমক-
চোর চোট্টা তোরাই যারা মসনদে বসেছিস
আমার শিবু চোর!
চুদিয়ে বের করে দেব সবাইকে শাড়ির তলা দিয়ে –
শিবুকে মেরে ফেলেছিল কারা পিটিয়ে
শিবুর মাকে পাভলভ চেনে না
রাস্তাই চিনেছে ওকে
২২)
পাভলভে প্রেম নেই
বসন্তর রেণু অ্যালার্জিতে হাঁচে
এ ওকে কামড়ে দিতে চায়, ও একে ঠাস করে এক চড়
গলা জড়িয়ে কাঁদে ওরা
ঘুমিয়ে পড়ে শান্ত হয়ে
পাগলের মত প্রেমিক আর পাগলির মত প্রেমিকা
নিয়ে পাভলভের সুখের সংসার।
২৩)
শত্রুও ওরা একে অপরের
খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি
জামাকাপড় ছিঁড়ে নেওয়ার বাই
উলঙ্গ এসেছে, উলঙ্গই যেতে হবে
মাঝখানে পোশাক বাহুল্য, ওরা জেনে গেছ।
২৪)
শান্ত পাগল বড় নির্মম
কাছে গেলে পাথর ছুড়ে মারতে পারে
চোখ খুবলেও নেয়
হাত মুচড়ে দিয়ে বলে,
‘কী রে, আর করবি?’
২৫)
পাগলের বাসা নেই,
বাড়িও নেই কোথাও
পাভলভ হাসপাতাল মাত্র,
পাগল জেনেছে।
পাগলের ছুটি হয় না
আমাদেরও ছুটি নেই তাই
মৃত্যু যতক্ষণ না ডেকেছে।