কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য
কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য
লেখক / সংকলক : Web Admin
জঙ্গলফায়ার একটি অলৌকিক ঘোড়া এবং এক জোড়া শালিখ
কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য
আগুনরা মরে গেছে
চারপাশে হাউলিং হলুদ
পশ্চিম ও পূব দুদিকেই লাল।তবে ক্যানভাস আকাশে রং দুটির ছোপ কিছু কিছু আলাদা। পূবের রং জ্বলন্ত হলুদ—এতক্ষণ আগুন রং ছিল—এখন ডিমের কুসুম পশ্চিমে লাল ছোপ মুছে এখন অন্ধকার মাখছে। এমনটাই ধূসর সন্ধ্যা। গেষ্ট হাউসের সাদা মর্মরে গ্রাফিত্তি ওরা দুজন।মাঝখানে পাথরের টেবিল- দুদিকে দুটি বেতের চেয়ারে ওরা। মুখোমুখি তবে একে অপরকে দেখছিল না।যেন দুজন বসে আছে দুজন কে নিয়ে আবার নেই ও। আসলে ওদের দুজনের মঝখানে ঢুকে পড়েছিল তৃতীয় কোন ও রং, সময় অথবা আগুন।
ওরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছে; আবার বলছে ও না ওদের সংলাপ ণ্ডলো পাতা ঘাস লনে, মোজায়েক মসৃণ বেডরুমে , নীল বেডস্প্রেডে এভাবে বাজতে থাকে ;
--- ‘ বাঁশের সাঁকো টা দুলছে’
--- ‘ বনভূমি ময় পাতাঝরা বসন্ত’
-‘ আঙ্গুলে আঙ্গুল রাতলিপি নির্যাস যাদুঘর’
দুজন চুপচাপ।চায়ের পেয়ালায় ছোট্ট চুমুক। রোদ মরে যেতে অন্ধকারে নিষিদ্ধ ভুবন ।
--- ‘ তিনটে দমকল!’
-‘ তাও আগুনটা পুরোপুরি নেভেনি
--- ‘ এতো ধূমল, পাংশুল আকাশ’
আগুন তো তাই –
-আগুন কি সব পোড়ায়—
- কিছু কিছু মথন গন্ধ
একলা জামা, সাগর জল
ধানের বোঁটায় দুধ----
‘ সমূহ আণ্ডনে যখন পুড়ছে ঘর বসত তুমি কি তখন
কবিতা—
‘ নিম্ন নাভি কড়িযোনি মুদ্রার আকাশে
ম্যামথ বাড়ি লাঞ্ছিত আকাশ’
আগুন কি পোড়ায় জল যান?
কথা শরীর উদোম?
পা ঘষটে ঘষটে সন্ধ্যা নামছে।সন্ধ্যা নামলে কি এমন শব্দহীন আকাশ, পাখিরা ডানা ঝেড়ে শরীর থেকে খুলে নিচ্ছে উড়ান জনিত ক্লান্তি; কোলাজ আকশে এখন কিছু লাল মেঘের টুকরো।চপ্পল ঘষটে ঘষটে
সাব , ডিনার কে লিয়ে ক্যায়া মাঙ্গাউ ?
কুছ ভী বনা লো
গাঁও যানা পড়েগা ।আন্ডা অৌর চিকেন লে আউ?
কিতনা দূর?
তিন চার কিলোমিটার হোগা
ক্যায়সে যাওগে?
ভটভটিয়া হ্যায় না
উধার আগ----
হাঁ সাব আভি ভি বুঝা নেহি।
ক্যায়সে লগা আগ?
ক্ষয়াটে চোখে মায়োপিক হাসি
আরে সাব জঙ্গল মে ইস টেইম পেঁ আগ তো লগতাই রহতা হ্যাঁয়
হূ ।ডেনজারাস্
কুছ ডেনজার নেহী হ্যাঁয় সাব।জঙ্গল মে জব্ গরমি জ্যায়দা হোতি হ্যাঁয় না তব আপনা আপ আগ লগ্ যাতি।
তো সাব ম্যঁয় চলা
ওয়ালেট খুলে একগোছা নোট ণ্ডঁজে দিল ওরা।নোট ণ্ডলিকে বসন্ত বাতাসের এলোপাথাড়ি পাগলামো থেকে বাঁচাতে জীর্ণ কালো আদিবাসী ভুখা হাত দুই হাতে সাপটে ধরে।।
সাব জঙ্গল দেখতে আসিয়েছেন তো দেখে লিন। জঙ্গল ভী তো এক আওরাত্ হ্যাঁয় সাব। বহুত দিল্লাগি বহুত মস্ত্ বহুত প্যার ভী হ্যায় সাব
ওরা চমকে ওঠে। জঙ্গলের আলো আধাঁরি ওদের মাপে। ওরা দুজন দুজনকে মাপে।
----শহর ক্লান্ত চোখে হতাশার তমিস্রা
প্রতিদিন যাপনের হর্ষকামী
বিষাদ গ্রন্থি সকল
----যাপন না যাপনের হলুদ রোজনামচা
----জটযান নগ্নতায় সেপিয়ান্স হল্লাবোল
----টিটেনাস সলিউশনে ভেজানো ক্লান্ত স্লিপিং গাউন
রাত গভীর হলে আগুন নিভে যায়
স্বাধীন বাতাস খেলা করে
বিপ্লবী চেতনায়----
খাওয়া টা একটু বেশীই হয়ে গেল।
লোকটার রান্নার হাত ভাল
এতো বড় একটা গেষ্ট হাউসে আমরা দুজন
তোমার বুঝি ভয় করছে?
ভয় করছে বললে তুমি বুঝি খুশী হবে?
উফ্। কি কথার কি জবাব।
থাক্। আমরা প্যাচ আপ করতে এসেছি
জীবনের প্যাচ আপ এতো সহজ নয়।
মাঝখানে নীরবতা নেমে এলে ঝরা পাতারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মতো—
কী
এখানে ইন্টারনেট কাজ করছে না।
ফোন কানেকটিভিটি নেই—
দারুণ!
হয়তো অনেক ইমপোরট্যান্ট কল মিস করছি
জীবনের থেকে ইমপোরট্যান্ট কিছু আছে কী?
ট্রেকিং কলার লাগানো জন্তর মতো আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদেরব্যাক্তি সত্ত্বা
সেপটিক ধরা ঝিমন্ত মগজে যখন রোবটিক ভালবাসা
এখন এক মুহুর্তের জন্য আমরা পলাতক স্বেচ্ছ্বাচারী বাতাস----
বলো না ,বাতাস ও এখন ডাটা বন্দী ।আকাশ ও এখন পর্যবেক্ষণ কাঁচের আওতায়
হুররা –লেট আস্ এনজয় আওয়ার স্বাধীনতা।
ওরা সেই আদি অরণ্যে অরণ্যচর প্রথম মানব /মানবী। হাঁটতে হাঁটতে ওরা জঙ্গল ফায়ারের মুখোমুখি।
ইস, অনেক গাছ মরে গেছে
- অনেক পাখি,অনেক হরিণ, অনেক বাইসন
আরো জঙ্গলের গভীরতায় ওরা ।দীঘল অরণ্য ক্রমশঃ ওদের রাত শরীরে ঢুকে যায়।অমলতাস হলুদ এখন ঘাস জমিতে
‘ দ্য, ওয়েট ওব দ্য ওয়ার্ল্ড
ইজ লাভ
আন্ডার দ্য বার্ডেন ওব
সলিচিউড
আন্ডার দ্য বার্ডেন ওব
ডিসস্যাটিসফেকশন’
এসো একটু বসি।ওরা দুজন পাশাপাশি।
- কতো দিন এভাবে হাতে হাত রেখে বসা হয় নি।
- কতোদিন এভাবে নিস্তব্দ্ধতা শোনা হয় নি।
-- ‘ হোয়াট স্ফিঙ্কস্ আ্যন্ড সিমেন্ট আ্যন্ড আ্যলুমিনিয়াম ব্যাস্ড ওপেন দেয়ার স্কাল্পস্ আ্যন্ড এইট আপ দেয়ার ব্রেইনস আ্যন্ড ইমাজিনেশন--- ;’
- এই অরণ্যে না এলে আমি নিজেকে চিনতে পারতাম না
এই অরণ্যে না এলে আমি ভালবাসার হাত ধরতে পারতাম না
সাবওয়ের প্যাঁচলো সভ্যতা আমাদের গলা টিপে ধরেছিল
হঠাৎ একটা পায়ের শব্দ ওদের চকিত করে।ওরা আধো অন্ধকারে কান পাতে।
ঘোড়ার পায়ের শব্দ না? –
ঠিক বলেছ
এখানে ঘোড়া?
অপূর্ব সাদা একটি স্বপ্নের ঘোড়া ওদের সামনে--- তার নীল দুটি চোখ থেকে ঝরে পড়ছে জোছনা মাখা চাঁদের মদ—তার মুখের চারপাশে অভ্র কাঁচ স্বেদ বিন্দু।
ঘোড়াটি র বল্গা ধরে ওদের সামনে এক পুরুষ ঘোড়া থেকে নেমে এলেন।মধ্যযুগীয় সামন্ত নৃপতির মতো তাঁর পোষাক—
--‘ এই বনভূমিতে তোমাদের স্বাগত জানাই।
আপনি কে?
অশ্বারোহীর চোখে কৌতুক।
আমি এই অরণ্যের সন্তান।
আপনার পোষাক টা তো---
স্মার্ট সিটি,সাইবার কাফে কিংবা ইন্টারনেট যুগের উপযুক্ত নয় তাইতো?
অশ্বারোহী এবার ঘোড়াকে একটি শাল গাছে আলতো করে বেঁধে ওদের মুখোমুখি।
এ আমার ঊচ্চৈশ্রবা।
ইন্দ্রের ঘোড়া---
আমিই ইন্দ্র---
ইন্দ্র তো মিথ---
তাই নাকি? তাহলে নানাসাহেব—
আ্যঁ-----সিপাহী বিদ্রোহের সেই নায়ক যাকে ইংরেজ রা কখন ও ধরতে পারেনি---
তাহলে ধরে নাও আমি কানু মাঝি
কানুমাঝি?
এবার অশ্বারোহীর চোখে বিদ্যুৎ--- গলায় তীব্র শ্লেষ /বিলাপ/ রাগ/রিরংসা/হতাশা—
নাম শোননি বোধহয়? সাঁওতাল বিদ্রোহের মহানায়ক কানুমাঝি—টাঙ্গি আর তীরধনুক নিয়ে গোরাদের সঙ্গে লড়াই করেছিল—শেষতক্ পারেনি বটেক—গোরারা তাঁকে ধরে এই জঙ্গলে ফাঁসি দিয়েছিল-- ।এই অরণ্য আমার,আমাদের – যারা এই অরণ্য কে আমাদের হাত থেকে কেড়ে নিতে চাইবে আমার সংগ্রাম জারি থাকবে তাদের বিরুদ্ধে--- এই অরণ্যকে যারা ধ্বংস করতে চাইবে আমদের সংগ্রাম তাদের বিরুদ্ধে—আমি এই বৃক্ষ,এই জোছনা,এই পাহাড়ি ঝর্ণা,এই অরণ্যচর পশু পাখি নদী মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার চাই—এই অরণ্যের অধিকার চাই----
ঊচ্চৈশ্রবা দুবার সাংকেতিক হ্রেষাধ্বনী করতেই অশ্বারোহী তড়িৎ গতিতে ঘোড়ার পিঠে চেপে গাছেদের মাঝখানে মিলিয়ে গেল।
ওরা দুজন জঙ্গল ফায়ারের নিভে যাওয়া আলোয় জোনাকির খেলা খেলতে খেলতে অরণ্যে হারিয়ে গেল---- ওরা ক্রমশঃ অরণ্য হয়ে যেতে লাগল----
Review Comments
সোসাল মিডিয়া কামেন্টস