রীতা বিশ্বাস পান্ডে
Author / Editor : রীতা বিশ্বাস পান্ডে
বেলকনির সেই টবটা
রীতা বিশ্বাস পান্ডে
গত রবিবার আমি ঘুম থেকে উঠে বেলকনিতে পায়চারি করছিলাম। এমন সময় নাকে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ এসে লাগলো। আমি বেলকনি দিয়ে ঝুঁকে এদিক ওদিক তাকালাম কিছুই দেখতে পেলাম না। হঠাৎ বেলকনির দরজা দিয়ে ভেতরের দিকে তাকাতেই দেখলাম যে মাঝখানের ঘরটাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। যেকোনো সময় বেডরুম পেরিয়ে আগুনটা বেলকনিতে এসে আমাদেরকে লাগতে পারে। আমাদের বলতে এখানে টিটু আর আমি। আমি চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু পাশের বেলকনি থেকে কেউই বেরিয়ে এলো না। এমনকি বেলকুনি দিয়ে উঁকি মরে দেখলাম যে বেডরুমে আমার বর বেশ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম। আমার সাথে সাথে টিটু চিৎকার করছে। অবোধ প্রানী। জোর করে কোলে উঠালাম ওকে। ওকে কোলে নিয়ে দৌড়ে ব্যাড রুমে ঢুকলাম। বরকে অনেক ধাক্কা দিচ্ছি কিন্তু বর কিছুতেই উঠছে না বলছে, ' আমাকে আরেকটু ঘুমাতে দাও'। আমার তখন গলা ছেড়ে কান্না। হাউ হাউ করে কান্না। অন্যদিকে টিটুর ভাউ ভাউ করে ডাকছে। একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! কিন্তু বর ঘুম থেকে উঠছে না। ঘুমন্ত অবস্থায় শুধু বলছে, 'আমাকে একটু চা দাও'। এদিক থেকে দেখতে পাচ্ছি আগুনটা মাঝখানের ঘর থেকে বাইরের ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যেকোনো সময় বেডরুমেও এসে ঢুকতে পারে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না? নিরুপায় হয়ে বরের গায়ের উপর থেকে লেপখানা তুলে নিলাম। আমাকে আর টিটু কে ভালো করে জড়িয়ে নিলাম তাতে। বরের ওদিকে হোস নেই তিনি আবার নাক ডাকতে শুরু করেছেন। আমি সেই লেপ দিয়ে ভালো করে নিজেদের জড়িয়ে নিলাম। টিটু আমার কোলে। এরপর এ ঘর ও ঘর হয়ে বাইরের ঘরের দিকে দৌর লাগালাম। লেপে ততক্ষণে আগুন লেগে গেছে। গরম একটা আচ লাগছে গায়ে। তড়িঘড়ি করে বাইরের দরজাটা খুললাম। দেখলাম লোহার গেটটাতে তালা লাগানো। টিটু কে সেখানে নামিয়ে দিলাম আমি বললাম, ' টিটু চুপ চাপ এখানে বসে থাক'। সেও ভয়ে কাঁপছে চুপচাপ বসে পড়ল। আমি লেপের আগুনটা ঝেরে ঝেরে নিভিয়ে দিলাম। এটা করতে গিয়ে আমার হাতটাও অনেকখানি পুড়ে গেল। আমি আবার আপাদমস্তক লেপ মুড়ি দিয়ে দৌড়ে এদিকে আসলাম। ছোট ঘরটার পাশেই আমার রান্নাঘর। সেখানে বাইরের দরজার চাবি রাখা থাকে। চাবি খানা উঠিয়ে নিলাম। নিয়ে আবার ঊর্ধচ্ছ্বাসে বাইরের দরজার দিকে ছুটলাম। যেতে যেতে আমি লেপটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম কারণ লেপে আগুন মারাত্মক ভাবে লেগে গেছে। সেটা আর কিছুক্ষণ গায়ে থাকলে নিজে পুড়ে মরবার সম্ভাবনা। তো আমি কম্পিতো হাতে লোহার দরজাটা চাবি দিয়ে খুললাম। তারপর আবার টিটু কে কোলে তুলে নিলাম। টিটু ভয়ে কিছু বুঝতে না পেরে আমার হাতে একটা কামড়ে দিলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম। এমনিতে আমি অনবরত চিৎকার করেই যাচ্ছিলাম বাঁচাও বাঁচাও করে অথবা আগুন আগুন করে। হাত কেটে রক্ত পরছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই। অনবরত চেঁচিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু একটা অদৃশ্য কারণে কেউই আমার কোন জবাব দিচ্ছিল না। এবার আমি বাইরের বারান্দা পেরিয়ে এলাম। দৌড়তে দৌড়তে সিঁড়ি দিয়ে নামলাম। আশেপাশের ফ্ল্যাট গুলোর দরজা তখনো বন্ধ। আমি টিটুকে কোলে করে রাস্তা দিয়ে ছুটছি। আমার বেলকনির নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম বর বেলকনি থেকে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে বলছে এই আমাকে চা বানিয়ে দিয়ে গেলে না তাড়াতাড়ি চা বানিয়ে দাও অনেক বেলা হয়েছে আমি শুনছি না দৌড়ুচ্ছি কেবল। উনি রাগ করে বেলকনিতে রাখা ফুলের টবটা ছুড়ে মারলেন আমার দিকে। টবটা এসে জোরে আমার মাথাতে লাগলো, ফিনকি দিয়ে রক্ত!
আর তখনই আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল । দেখি বর আমাকে ঝাঁকিয়ে উঠতে বলছে। বলছে, "অনেক বেলা হলো ওঠো একটু চা বানিয়ে দাও"।
আর তখনই একটা জোরে আওয়াজ হলো বেলকনিতে। তড়িঘড়ি করে দুজনেই বেলকনিতে বেরিয়ে এলাম! আর আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম আমার গোলাপ ফুলের অত বড় টবটা নীচে রাস্তায় পড়ে চৌচির হয়ে গেছে!