সুতপা ঘোষ দস্তিদার
লেখক / সংকলক : সুতপা ঘোষ দস্তিদার
আত্মঘাতী
সুতপা ঘোষ দস্তিদার
(১)
পৃথিবীর পুরোনো বাসিন্দারা
নির্বিবাদী নিষ্পাপ,
ঠিকানা হারাচ্ছে তাদের ক্রমে –
আমি নগরী বিভঙ্গে মজে
ভাজ করে বুক পকেটে
বেদনা যত সৃষ্টিজাত
চেয়ে চেয়ে দেখি তাই আড়চোখে
পৃথিবীর পুরোনো বাসিন্দারা
ঠিকানা হারাচ্ছে তাদের ক্রমে।
প্রাকজ্যোতিষ ফুলেরাও এ সময়ে
বেমানান বড় উচ্চাকিত বর্ণসমাহারে,
আলোকশূন্য জনপদ চাঁদ হাতড়ে
খুঁজে ফেরে তার অস্তিত্বের মানে।
বিন্দু জমে সিন্ধু ময়লা জমে পাহাড়;
দুঃখ জমে লাভা হবে কবে?
বিসুভিয়াস ফের পোড়াবে নগরী
দাউ দাউ জ্বালাবে আমাকে?
(২)
প্রগতি মেরেছে তাড়া
ডেলি পাল্টে দিক পাল্টে অতএব
শুরু হয় ছোটা –
দিশাহীন থমকাই পথের ধারে
চলকানো মোহ মেখে তরুণী মন
‘আয় আয়’ ডাকে –
বিজ্ঞাপন নগরী আলোয় ভাসলে
দারিদ্র্য জ্বলজ্বল করে উড়ালপুলের নীচে,
খাদারে, ফুটপাতে –
কোন দিকে যাওয়া যায় – নেমে যাই দ্বৈপায়ণে—
জল গায়ে মাখে না কিছুই – এটাই যা রক্ষে,
ঝড় এসে বাজী খোলে
স্বীকার করবো চ্যালেঞ্জ
মরি অথবা বাঁচি
ওলোট পালোট কিছু তো হবে।
স্খলন
(১)
হাঁ করে বসে লোভ রাস্তার বাঁকে –
গহ্বর দেখেনি জন্মে, তাই হাত ঢোকানো
দেখতে দেখতে জলাঞ্জলি সবই
ভিটে মাটি হৃদয়তত্ত্ব …
মহীরুহ আশা করে বীজ ছড়াও আজ
মাটির গামলায় –
অথচ একদিন
আকাশ-বাতাস-মাটি-প্রেম
কত কীই না ছিল হায়!
মেঘ না চাইতেই জল এসেছে হাতে
কদর বোঝোনি জলার!
আর বাজে না আকাশে মেঘ মলহার!
ধীরে ধীরে উধাও সবই—
পুরোনো মাঠ, পুরোনো বিল, ছু-ক্তি-তা উঠোন!
বিনা শব্দে পতন হয় না গাছের পাতারও
চরিত্রই শুধু ব্যতিক্রম—
ঘাড়ে ধরে গর্ভ খোঁড়াচ্ছে প্রগতি
অতএব বোধিজ্ঞান
অমলতাশে দোল খাকগে এখন!!!
(২)
একটু একটু করে প্রায় পুরো আকাশ
দখল করেছে মেঘ, প্রেম প্রত্যাশী
কালো পুরুষের বলিষ্ঠ বুকের তলায় এখন
নীলাম্বরী…
রসসিক্ত হব বলে আঁচল পেতে শুয়ে আছি
শুকনো নাবালে
একটুও সবুজ নেই, তাই টিয়ারা আর
আসে না কাছে।
সেই কবে এক সবুজ টিয়ার পিছু নিয়ে
অচিন কোন মানবজমিনে পৌঁছে দেখিঃ
সবুজে সবুজে সে আমার আঁচলে
সবুজের বীজ বুনেছিল তারপর
আশরি বছর সবুজ হয়ে নিজেকে হারিয়েছি কতবার!
টের পাইনি ধীরে ধীরে কবে শুকিয়েছে জল
আমাকে নিঃশেষ করে একেবারে।
অব্যক্ত
পাডি় দিল বহুদূরে ঝিঙেফুল আলো
বুঝিনি কখনো সে আলো ঘিরে
কত ব্যাথা ছিল।
শিস দিয়ে যেতে যেতে
হাওয়ার ভাঁজে রেখে যাওয়া কথা
পাতায় পাতায় জাগায় আকুলতা,
ঝরে পড়া পাতা চেপে ধরে বুকে
বসে আছি হাপিত্যেশ
সে কথা শুনবো বলে।
ঝিঙে ফুলের ঘ্রাণ মেখে
বহুদূরে চলে গেছে আলো—
মেপে দেখিনি সে আলোয়
কত ব্যাথা ছিল।।